ডায়াবেটিস ও গর্ভাবস্থায় ডায়েট: সুস্থ মায়ের জন্য পরামর্শ

 

ডায়াবেটিস ও গর্ভাবস্থায় ডায়েট: সুস্থ মায়ের জন্য পরামর্শ

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস (গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস) অনেক নারীর জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং অবস্থা হতে পারে। এটি নিয়ন্ত্রণ না করা হলে মা ও শিশুর উভয়ের জন্য ঝুঁকি বাড়তে পারে। তবে সঠিক ডায়েট ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কেন গুরুত্বপূর্ণ?

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়, যা শিশুর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, প্রি-টার্ম ডেলিভারি, সিজারিয়ান ডেলিভারির ঝুঁকি এবং ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করা খুবই জরুরি।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে সঠিক ডায়েট পরিকল্পনা

১. কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন

স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
ভালো উৎস: ব্রাউন রাইস, ওটস, গোটা গমের রুটি, সবুজ শাকসবজি, ডাল।
এড়িয়ে চলুন: সাদা চাল, ময়দার তৈরি খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, সোডা ও সফট ড্রিংকস।

২. প্রোটিনযুক্ত খাবার খান

প্রোটিন গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধির জন্য জরুরি এবং এটি রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়ক।
ভালো উৎস: ডিম, মাছ, মুরগির মাংস (চামড়া ছাড়া), দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম, ছোলা, মসুর ডাল।

৩. স্বাস্থ্যকর চর্বি বেছে নিন

ভালো চর্বি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং মায়ের শক্তির যোগান দেয়।
ভালো উৎস: অলিভ অয়েল, বাদাম, অ্যাভোকাডো, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড।
এড়িয়ে চলুন: ভাজা খাবার, প্রসেসড খাবার, অতিরিক্ত ঘি বা মাখন।

৪. আঁশযুক্ত খাবার খান

আঁশ (ফাইবার) খাবার ধীরে হজম করতে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ভালো উৎস: সবুজ শাকসবজি, ফল (কম সুগারযুক্ত যেমন আপেল, নাশপাতি, বেরি), চিয়া সিড, ওটস।

৫. ছোট ছোট মিল খান

একবারে বেশি খাবার না খেয়ে দিনে ৫-৬ বার ছোট ছোট মিল খান, যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।

৬. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?

  • মিষ্টিজাতীয় খাবার (মিষ্টি, চিনি, কেক, পেস্ট্রি)
  • সফট ড্রিংক ও ফ্রুট জুস
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার (ফাস্ট ফুড, ইনস্ট্যান্ট নুডলস)
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন (চা ও কফি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন)

ব্যায়াম ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন

সঠিক ডায়েটের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করুন।

শেষ কথা

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং নিরাপদ মাতৃত্ব উপভোগ করুন!

Share:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for your time to comment and ; no spam link please.

Copyright © Sarkarcare. Designed by OddThemes