**কিডনিতে পাথর হলে কী খাবেন এবং কী খাবেন না**
কিডনিতে পাথর (কিডনি স্টোন) হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা মূলত খনিজ লবণ ও অন্যান্য পদার্থ জমে কঠিন আকার ধারণ করলে সৃষ্টি হয়। এটি প্রচণ্ড ব্যথার কারণ হতে পারে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হতে পারে বা অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে কিডনির পাথর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
---
### **কিডনিতে পাথর হলে কী খাবেন?**
১. **প্রচুর পানি পান করুন**
- কিডনি থেকে অতিরিক্ত খনিজ বের করে দিতে প্রচুর পানি পান করা জরুরি। প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৫-৩ লিটার পানি পান করা উচিত।
২. **সাইট্রাস সমৃদ্ধ ফল ও রস**
- লেবু, কমলা, মৌসুমি, মাল্টা, আনারস ইত্যাদি সাইট্রাস ফল কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে।
- লেবুর রস পান করলে প্রস্রাবের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম বের হয়, যা পাথর প্রতিরোধ করে।
৩. **কম অক্সালেটযুক্ত খাবার**
- আপেল, কলা, শসা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া এগুলো কম অক্সালেটযুক্ত খাবার, যা কিডনির জন্য ভালো।
৪. **ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (পরিমিত পরিমাণে)**
- দুধ, দই, পনির ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
- অনেকে মনে করেন, ক্যালসিয়াম বেশি খেলে পাথর হয়, কিন্তু পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে এটি অক্সালেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, ফলে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৫. **ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার**
- ম্যাগনেশিয়াম কিডনির পাথর গঠনে বাধা দেয়। বাদাম, তিল, কলা, পালংশাক, ডাল এগুলো ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস।
---
### **কিডনিতে পাথর হলে কী খাবেন না?**
১. **অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার কম খান**
- কিডনির পাথর সাধারণত ক্যালসিয়াম অক্সালেট দিয়ে তৈরি হয়, তাই অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া উচিত।
- পালংশাক, বিট, চকোলেট, বাদাম, কফি, চা, স্ট্রবেরি, আলু, ব্রোকোলি এগুলো বেশি পরিমাণে খেলে পাথর বাড়তে পারে।
২. **অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন**
- বেশি লবণ কিডনির মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা পাথর গঠনে সাহায্য করে।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিপস, ফাস্টফুড, প্যাকেটজাত খাবার কম খেতে হবে।
৩. **অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার**
- অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন (গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির মাংস, ডিম) কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়, যা পাথর তৈরি করতে পারে।
৪. **সফট ড্রিংকস ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়**
- কোক, সোডা, এনার্জি ড্রিংকস, কফি এগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর। এতে ফসফোরিক অ্যাসিড থাকে, যা পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. **চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার**
- অতিরিক্ত চিনি কিডনিতে ক্যালসিয়াম জমার মাত্রা বাড়ায়, যা পাথর তৈরি করতে পারে।
---
### **উপসংহার**
কিডনির পাথর হলে পানির পরিমাণ বাড়ানো, কম অক্সালেটযুক্ত খাবার খাওয়া এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত খনিজ বের করার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, অক্সালেট ও ইউরিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার কম খেলে কিডনির পাথর প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for your time to comment and ; no spam link please.