আমাদের খাওয়া দাওয়া কিসের ওপর নির্ভর করে?
Factors that decide what we eat.
বেঁচে থাকার জন্য সবার খাবারের প্রয়োজন। পৃথিবীর চাকা সচল থাকে খাবারের জন্য। মানুষ কাজ করে পেটের টানে। খাবার জীবনের মূলমন্ত্র।
কিন্তু এই খাবারের প্রকৃতি অর্থাৎ মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পিছনে কিছু কারণ থাকে। এই নিবন্ধটিতে আমরা তাই আলোচনা করবো।
আমরা কখন কি খাব বা খাবনা তার নির্ধারণ করে কিছু বিষয় বা ফ্যাক্টর (factors)।
কিছু বিষয় যা নির্ধারণ করে আমরা কি খাব। কি কি সেই বিষয় বা ফ্যাক্টর ? আসুন জেনে নিই :
১.ক্ষুধা বা খিদে:
আমরা জানি যে খিদে পেলে আমরা খাবার খেয়ে থাকি। এখন কথা হচ্ছে খিদে পেয়েছে তা আমরা বুঝতে পারি কিভাবে ? আর খিদে পায় কিভাবে ? তার জন্য আমি একটু শরীর বিদ্যার থেকে ছোট কথা সহজ ভাষায় বলছি।
খিদের শুরু হয় পেটের একটি যন্ত্র পাকস্হলীতে । যখন পাকস্হলী খালি থাকে তখন সেখানে অ্যাসিড নিঃসরণ হয়। সত্যি বলতে পাকস্হলীতে সব সময় অ্যাসিড নিঃসরণ হয়। খালি পেটে সেই অ্যাসিড পাকস্হলীর দেয়ালে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। সেখান থেকে উত্তেজনার সংবাদ স্নায়ুর মাধ্যমে মাথায় বা মস্তিষ্কে পৌঁছায়। মস্তিষ্ক তখন শরীরের অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে নির্দেশ পাঠায় যাতে পাকস্থলী তে খাবার দেওয়া হয়। তার জন্য চোখের কাজ খাবার অনুসন্ধান করা। পায়ের কাজ খাবারের কাছে পৌঁছানো। হাতের কাজ খাবারের গ্রাস মুখে তূলে দেওয়া।মুখ খাবার কে চিবিয়ে নরম করে গিলে পাকস্থলীতে পৌঁছে দেয় ।
২. চোখের খিদে:
অনেক সময় আমরা পেট ভরে থাকে তবুও আমরা কিছু খেতে ভালোবাসি। কেন ? কারণ কিছু জিনিষ আছে যা আপনি খুবই পছন্দ করেন।তার স্বাদ নিতে ভরা পেটে হলেও আপনি সেই খাবার খেয়ে নেবেন।
৩. পুরনো সুখকর অভিজ্ঞতা (খাবার খাওয়ার):
আগের অনুষ্ঠান বাড়ি বা পার্বনে বিশেষ বিশেষ খাবার খেয়ে থাকলে এবং তার স্বাদ যদি খুব ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সেই খাবার আবার খাওয়ার জন্য ইচ্ছে করবেন।
৪. বাধ্য হয়ে খাওয়া:
কখনো কখনো বাধ্য হয়ে খাওয়া হয়ে থাকে।
ছোট বেলায় মায়ের শাষনের ফলে বাচ্চাদের খেতে হয়।
আপনি বন্ধু দের সাথে বা পরিচিত লোক এর সাথে কোথাও বেড়াতে গেলে এবং সেখানে খাবার আয়োজন করা থাকলে আপনার খাবার ইচ্ছা না থাকলেও বাধ্য হয়েই আপনাকে খেতে হবে । বন্ধু দের সাথে আড্ডা দিতে গেলেও একই ব্যাপার। তা যদি নেশার কিছু হয় তাও।
এবার কথা হচ্ছে এত কিছু হলেও , যা আপনি খাবেন তা সত্যি খাওয়া উচিত কি না , খাবারের যোগ্য কি না তার বুঝতে হবে। কিভাবে ?
ছোট বেলা থেকেই আমরা যা খাই তা কতটা হজম হয় , মুখে স্বাদ লাগছে তার ওপর নির্ভর করে আমাদের একটা খাদ্যাভ্যাস তৈরি হয়।বড় হয়ে আমরা মোটামুটি একই অভ্যাস পালন করি।
৫.কষ্টদায়ক খাবার:
যে খাবার খেয়ে পেটে জ্বালা করে,ব্যাথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পায়খানার রাস্তা জ্বালা পোড়া করে সেই খাবার আবার খাওয়ার সময় আমরা দু বার ভাবি।
৬. তথ্য সমৃদ্ধ খাবার:
টিভি, খবর, সোশ্যাল নেটওয়ার্কস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ঠিক করি কোন রোগ থাকলে কি খাবেন বা খাবেন না।যেমন: হার্টের জন্য তেল বেশি খাবেনা।প্রেশারে লবনের পরিমাণ কম হবে। সুগারের রোগী মিষ্টি কম খাবেন ইত্যাদি।
৭.মূল্য:
খাবারের মূল্য একটি অন্যতম কারণ। গরীবেরা উচ্চ মূল্যের খাবার কিনতে পারবে না। ধনী ব্যক্তি অল্প মূল্যের খাবার পছন্দ না ও করতে পারেন। রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে এমন খাবার কেউ খায় কেউ খায় না।
৮. জাতি:
বিভিন্ন জাতি বিশেষে খাদ্যাভ্যাস বিভিন্ন হয়। সম্প্রদায় ভেদে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়।
মানুষ কোন অঞ্চল-এ বসবাস করছেন তার ওপর নির্ভর করে তার খাবার ধরন। বিদেশ ভ্রমন করতে গেলে বা সেখানে বসবাস করতে গেলে সেখানে যে খাবার পাওয়া যায় তার সাথে মিলে খাবার অভ্যাস পালন করতে হবে।
৯. সহজলভ্যতা:
যে জিনিসটি যেখানে সহজলভ্য তাকে ঘিরে মানুষ খাবার তৈরি করার শৈলী গড়ে তোলে। যে খাবার বা ফল আমেরিকাতে পাওয়া যায় তার সহজলভ্যতা এশিয়ান দেশে না ও থাকতে পারে।
১০. শিক্ষা:
মানুষ কতটা শিক্ষিত তার ওপর নির্ভর করে তার খাবার ধরন। শিক্ষিত লোক ভাবনা চিন্তা করে খাবার ঠিক করে। অশিক্ষিতের খাবারের তালিকায় ভাবনার স্হান কম লভ্যতার স্হান বেশি।
১১. বয়স :
সব বয়সের মানুষের খাদ্যাভ্যাস একরকম হয় না। বাচ্চাদের খাবার একরকম। শৈশব ও যুবকদের খাবার ধরন একরকম। তাদের হজম শক্তি বেশি। বয়স্কদের হজম শক্তি কম হয় তাই সহজপাচ্য খাবার তাদের জন্য ভালো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for your time to comment and ; no spam link please.